সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পাঁচ সাহাবি হলেন—খাদিজা (রা.), আলী ইবনে আবি তালিব (রা.), জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.), আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও উসমান গনি (রা.)
সবার আগে ইসলাম গ্রহণকারী পাঁচ সাহাবি
আল্লামা ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেন খাদিজা (রা.)। পুরুষদের ভেতর সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)। তাঁর পর জায়েদ বিন হারিসা (রা.)। তাঁর পর আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।
সিদ্দিকে আকবর (রা.)-এর হাতে শীর্ষ পাঁচ সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা হলেন উসমান ইবনে আফফান (রা.), জোবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.), তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.), সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.), আবদুর রহমান ইবনুল আউফ (রা.)। মূলত আবু বকর (রা.)-এর আহ্বানে তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে যান এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। (সিরাতে ইবনে ইসহাক)
প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পাঁচ সাহাবির পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. খাদিজা (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.) নারী-পুরুষ সবার ভেতর প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুমিনদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম অজু করে নামাজ আদায় করেন। নবুয়তের আগে ও পরে একটি দীর্ঘ সময় খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-এর সংসারে কাটান। পুত্র ইবরাহিম ছাড়া তিনি ছিলেন নবীজি (সা.)-এর সব সন্তানের মা। নবুয়তের আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হেরা গুহায় নির্জনে সময় কাটাতেন, তখন তিনি তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। ইসলাম গ্রহণের পর নিজের সমুদয় সম্পদ ইসলামের সেবায় ব্যয় করেন এবং কুরাইশের জুলুম-অত্যাচার থেকে নবীজি (সা.)-কে আগলে রাখতেন। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
২. আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)
ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-এর পূর্ণ নাম হলো আবুল হাসান আলী ইবনে আবি তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব আল-কুরাইশি আল-হাশেমি। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের অন্যতম এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা। আলী (রা.) ৬০০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি (সা.) মদিনায় হিজরতে তাঁকে নিজ বিছানায় শুইয়ে রেখে আসেন। তিনি তাবুক ছাড়া সব যুদ্ধে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। ৬৬১ হিজরিতে তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
৩. জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)
বিশিষ্ট সাহাবি জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) শৈশবে চুরি হয়ে যান। তাঁকে খাদিজা (রা.) ক্রয় করেন। বিয়ের পর তিনি মহানবী (সা.)-এর সেবায় জায়েদ (রা.)-কে উপহার দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দেন এবং সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। পরিণত বয়সে নিজের চাচাতো বোন জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দেন। তিনি আলী (রা.)-এর পর ইসলাম গ্রহণ করেন। কোনো সারিয়া বা ছোট যুদ্ধাভিযান যাতে নবীজি (সা.) অংশগ্রহণ করেননি তাতে জায়েদ (রা.) থাকলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকেই আমির নিযুক্ত করতেন। তিনি মুতার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান।
৪. আবু বকর সিদ্দিক (রা.)
ইসলামের প্রথম খলিফা, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শ্বশুর ও হিজরতের সময়ের সঙ্গী ছিলেন আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনে আবু কুহাফা উসমান (রা.)। তিনি আসহাবে ফিলের আড়াই বছর পর জন্মগ্রহণ করেন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভেতর তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। মিরাজের ঘটনা সত্যায়ন করার কারণে তাঁকে ‘সিদ্দিক’ বলা হয়। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি মুসলিম উম্মাহর খলিফা নিযুক্ত হন। ১৩ হিজরিতে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
৫. উসমান গনি (রা.)
ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফান (রা.) ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দুই কন্যাকে তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায় তাঁকে ‘জুন-নুরাইন’ বলা হয়ে থাকে। ইসলামের জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করেন। ঈমান রক্ষার তাগিদে তিনি হাবশা ও মদিনায় দুইবার হিজরত করেন। আবু বকর (রা.)-এর আহ্বানে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ৩৫ হিজরিতে বিদ্রোহীদের হাতে শহীদ হন।
‘কিসসাতুল ইসলাম’ অবলম্বনে
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।